







নিজস্ব প্রতিবেদন: ১৮৭৮ সালের পর থেকে চলচ্চিত্র জগৎ থেকে তো বটেই বাইরের জগত থেকেও, নিজেকে অন্তরালে সরিয়ে নেন মহানায়িকা সুচিত্রা সেন। জীবনের শেষের তিন দশকেরও বেশি সময় তিনি কাটিয়েছেন সম্পূর্ণ লোক চক্ষুর আড়ালে,চার দেয়ালের ঘেরাটোপে। জীবনের শেষের দিনগুলিতে নানান ধরনের শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন মহানায়িকা। কেমন কেটেছিল তার জীবনের এই শেষের দিনগুলি তা নিয়েই আজকের এই বিশেষ প্রতিবেদনে আমরা আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করতে চলেছি।
সময়টা ছিল ২৩ শে ডিসেম্বর,২০১৩ সাল। শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণে স্বাস্থ্যের অতিরিক্ত অবনতি হওয়ায় সন্ধ্যাবেলা কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় মহানায়িকাকে। এরপর শারীরিক অবস্থা উত্থান পতনের মধ্যে দিয়ে চলছিল। ফুসফুসের সংক্রমণের পাশাপাশি হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়ায়, ২৯ শে ডিসেম্বর রাতে তাকে আইটিইউতে স্থানান্তরিত করা হয়।




এই সময় রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা তার ঘন ঘন ওঠানামা করছিল। ফুসফুসে জমে থাকা ফ্লুইডের পরিমাণও কিছুটা বেড়ে যায়।শ্বাসনালী থেকে কফ বের করে আনার জন্য তার শরীরে লাগানো হয় এন্ডোট্রাকিয়াল টিউব। এই টিউব পড়ানো থাকলে রোগীর পক্ষে কথা বলা সম্ভব হয় না। তাই জ্ঞান থাকলেও সেই সময় কারুর সঙ্গেই কথা বলতে পারেন নি মহানায়িকা। চিকিৎসকদের তিনি যা কিছু জানাতেন সবটাই ইশারার মাধ্যমে।
এন্ডোট্রাকিয়াল টিউবের জন্য তার মুখ দিয়ে খাওয়াও অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। কারণ এই সময় খাবার শ্বাসনালীতে আটকে যাওয়ার ভয় থাকে। তাই নির্বিঘ্নে খাবার খাওয়ানোর জন্য অনুমতি নিয়ে চিকিৎসকেরা তার শরীরে রাইস টিউব লাগিয়ে দিয়েছিলেন।এই সময় মহানায়িকার মুখ এবং চোখের কিছু অংশ ফুলে গিয়েছিল। সবকিছু মিলিয়ে আসলে সংকট কাটার কোন রকম লক্ষণই ছিল না। হাসপাতালে প্রায় ২৫ থেকে ২৬ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করেছিলেন মহানায়িকা সুচিত্রা সেন।




চিকিৎসকেরাও চেষ্টার কোন ত্রুটি রাখেননি। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে চিকিৎসা নিতে সুচিত্রা সেনের প্রবল অনীহা যে কোন একটা বড় বিপদ ডেকে আনছিল তার আঁচ পাচ্ছিলেন চিকিৎসকেরাও। কিন্তু মহানায়িকা চিকিৎসা নেওয়ার প্রত্যাখ্যানের ব্যাপারে নিজের জেদে এতটাই অনড় ছিলেন যে চিকিৎসকদের ভূমিকা এইসব ক্ষেত্রে কার্যত অসহায় দর্শকের মত হয়ে গিয়েছিল।
১৭ ই জানুয়ারি,সকাল সাতটায় মহানায়িকার পালস রেট আচমকাই নেমে যায়। এরপর তার হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে যায়। ডাক্তারি পরিভাষায় যাকে বলে ম্যাসিভ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট। শুরু হয় হৃদপিন্ডের ম্যাসাজ। কিন্তু সব রকম চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায় সকাল ৮টা বেজে ২৫ মিনিটে। এরপর যখন চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করলেন তখন একমাত্র মেয়ে অভিনেত্রী মুনমুন সেন এবং দুই নাতনী রাইমা সেন ও রিয়া সেন হাসপাতালেই ছিলেন। দুপুরে সুচিত্রা সেনের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার বালিগঞ্জের বাসায়।




সেখানে সবার শ্রদ্ধা নিবেদনের পর কেওড়াতলা মহাশ্মশানে শুরু হয় মহানায়িকার শেষকৃত্য। তোপ ডেকে তাকে জানানো হয় রাষ্ট্রীয় সম্মান। একমাত্র মেয়ে মুনমুন সেনের হাতে মুখাগ্নির পর কেওড়াতলা মহাশ্মশানে চন্দন কাঠের চিতায় শুয়ে বিদায় নেন কোটি কোটি ভক্তের ভালোবাসার নায়িকা। তার শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানও ছিল গোপনীয়তায় ঘেরা।
সাংবাদিক বা সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার সেখানে ছিল না। কেবলমাত্র কিছু নিকট আত্মীয়, অভিনয় জগতের কয়েকজন তারকা এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির উপস্থিতিতেই শেষ হয় আনুষ্ঠানিকতা। দূর থেকেই ছবি তুলে সন্তুষ্ট থাকতে হয় আলোকচিত্র সাংবাদিকদের। মহানায়িকা সুচিত্রা সেনকে যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই আমাদের এই বিশেষ প্রতিবেদনটি শেয়ার করে নিতে ভুলবেন না।এই ধরনের আরো তথ্য জানতে হলে আমাদের অন্যান্য প্রতিবেদন গুলির উপর নজর রাখতে থাকুন।।











