







নিজস্ব প্রতিবেদন: ছোটবেলাতেই তিনি হারিয়েছিলেন বাবাকে। পরবর্তীতে সংসারের হাল ধরার জন্য তিনি নেমেছিলেন থিয়েটারে। এরপর ধীরে ধীরে সুযোগ পান সিনেমায় এবং হয়ে ওঠেন বাংলার খলনায়ক। তবে খল চরিত্র ছাড়াও কমেডি চরিত্রেও বেশ নজর কেড়েছে তার অভিনয়। বহুবার একই ছবিতে একই রকম ভাবে খল এবং কমেডি দুটোই ফুটিয়ে তুলেছেন দক্ষভাবে। তিনি হলেন অভিনেতা রজতাভ দত্ত। আজকের এই বিশেষ প্রতিবেদনের মাধ্যমে তারই জীবনের কিছু অজানা কথা আমরা আপনাদের জানাবো। তাই প্রতিবেদনটি শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইল।
১১ই আগস্ট ১৯৬৭ সালের বাংলাদেশের যশোর জেলার এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম হয় রজতাভ দত্তের। জন্মের পরপরই তার পরিবার কলকাতায় চলে আসে। কলকাতায় এসে বালিগঞ্জ গভর্নমেন্ট হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করেন তিনি। এরপর গোয়েঙ্কা কলেজ থেকে পাস করেন উচ্চমাধ্যমিক। নেতাজি নগর কলেজ থেকে তিনি স্নাতক হয়েছিলেন। স্কুল জীবনে কিন্তু তিনি অভিনেতা হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন না। সেই সময় মন দিয়ে গান শিখতেন। অনেক বাংলা ছবিতেও কিন্তু তিনি গান গেয়েছেন। বিদ্যালয়ে ক্লাস নাইনে পড়াকালীন বাবা সুবোধকুমার দত্তকে হারিয়ে ফেলেন তিনি। সেই সময় দুই ছেলেকে নিয়ে সংসারের হাল ধরতে হয়েছিল রজতাভ দত্তের মাকে।




তার দাদা ছিলেন বছর পাঁচেকের বড়, তিনি চাকরি করতে বাইরে চলে যান। দাদা চাকরি করতে বাইরে চলে গেলে অনেকটাই একা হয়ে গিয়েছিলেন অভিনেতা। একাকীত্ব কাটাতে ধীরে ধীরে বন্ধুদের দল বাড়াতে থাকেন তিনি। ঘুরেফিরে আড্ডা দিয়ে সময়ে ভালোই কাটছিল। কিছুদিন রাজনীতিও করেছিলেন। তবে স্নাতক পাস করার পরে জীবন বদলাতে থাকে।
এই সময় গ্রুপ থিয়েটারে জয়েন করেন তিনি। ১৯৮৭ সাল থেকে পুরোদমে থিয়েটার করতে থাকেন তিনি। শুরুতে তিনি অন্তর্ভুক্ত গ্রুপের হয়ে নাটক করলেও, একে একে বেশ কিছু বড় দলের সঙ্গে কাজ করেছিলেন রজতাভ দত্ত। শুধুমাত্র থিয়েটার করে তো আর পেট চালানো যায় না! ১৯৯০ সালে প্রাইভেট কোম্পানির সেলস ডিপার্টমেন্টে একাউন্টেন্ট হিসেবে কাজে যোগদান রজতাভ বাবু। এসময় একসাথে চাকরি আর অভিনয় দুটোই সামলেছেন তিনি।




এরপর ১৯৯৩ সালে আচমকাই তিনি ছেড়ে দেন চাকরি। সম্পূর্ণরূপে থিয়েটারে ডুবিয়ে দেন নিজেকে। ১৯৯১ সালে প্রথমবার তিনি পেয়েছিলেন চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগ। নিতিশ রায় পরিচালিত এক পশলা বৃষ্টি ছবি দিয়ে অভিনয় জগতে পা রাখেন তিনি। এরপর স্বপ্নসন্ধানী নাট্য দলে তার অভিনয় তপন সিনহাকে মুগ্ধ করেছিল। নিজের ছবি হুইল চেয়ারে রজতাভ বাবু কে অভিনয়ের সুযোগ দেন তিনি। অজানা শত্রুসহ বেশ কিছু ছোটখাটো ছবিতে দেখা যায় তাকে।




তারপর পারমিতার একদিন, আজব গাঁয়ের আজব কথা, এমএলএ ফাটাকেষ্ট থেকে শুরু করে বেশ কিছু ছবিতে দারুন অভিনয় করেছেন রজতাভ বাবু। খলনায়ক হিসেবে প্রতিটা ছবিতেই বাজিমাত করেছিলেন তিনি। তারপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। বেশ কিছু হিন্দি ছবি এবং ওয়েব সিরিজেও দেখা গিয়েছে তাকে। একজন দক্ষ চরিত্রাভিনেতা হিসেবে একের পর এক বাংলা ছবিতে নিজেকে জনপ্রিয়তার শিখরে তুলে দিয়েছেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে ১৯৯১ সালে ভালোবেসে সোমা দত্তকে বিয়ে করেছিলেন রজতাভ বাবু।
পালিয়ে গিয়েই বিয়ে করেছিলেন তারা। কারণ সেই সময় রজতাভ বাবু সবে মাত্র চাকরিতে ঢুকেছেন আর থিয়েটারে অল্প সল্প কাজ করছেন। কেরিয়ার বলে বিশেষ কিছু ছিল না। অন্যদিকে সোমা দত্ত ছিলেন জমিদার বংশের এক স্বচ্ছল পরিবারের মেয়ে। তাই তাদের সম্পর্ক পরিবার মানতে চাইনি। তাই কোন উপায় না থাকায় শেষ পর্যন্ত পালিয়ে বিয়ে করতেই বাধ্য হয়েছিলেন তারা। বর্তমানে স্ত্রী এবং নিজের একমাত্র কন্যা সন্তানকে নিয়ে সল্টলেকের বাড়িতে সুখে শান্তিতে দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করছেন এই জনপ্রিয় অভিনেতা।











