







নিজস্ব প্রতিবেদন : সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে কমবেশি অনেক জায়গাতেই আপনারা হয়তো দাদা বৌদি রেস্টুরেন্টের বিরিয়ানির নাম শুনেছেন। যারা কলকাতার বাসিন্দা তাদের কাছে কিন্তু এই বিরিয়ানির নাম একেবারেই অপরিচিত নয়। বিরিয়ানি প্রেমী মানুষদের জন্য এ যেন এক স্বর্গ। তবে যারা কলকাতা থেকে দূরে বসবাস করেন অথবা এখনও পর্যন্ত এই দাদা বৌদি স্পেশাল বিরিয়ানি খাওয়ার সৌভাগ্য হয়নি তাদের জন্য আমরা নিয়ে চলে এসেছি আজকের এই বিশেষ প্রতিবেদন।
একদম সহজ পদ্ধতিতে কিভাবে বাড়িতেই আপনারা হুবহু এই রেস্টুরেন্টের সাথে বিরিয়ানি তৈরি করে নিতে পারেন সেটাই এই প্রতিবেদনে শেয়ার করব। যদি প্রতিবেদনটি ভালো লাগে এবং রেসিপিটি আপনাদের পছন্দ হয় তাহলে অবশ্যই নিজেদের মতামত কমেন্ট বক্সে জানাতে ভুলবেন না।




দাদা বৌদি রেস্টুরেন্টের স্পেশাল বিরিয়ানি কিভাবে বানাবেন বাড়িতে?
১) দাদা বৌদি বিরিয়ানি তৈরি করার জন্য আমাদের প্রথম এই ১২ কেজি পরিমাণ বাসমতি চাল নিয়ে নিতে হবে। এটা কোন ব্রান্ডেড চাল নয় আপনারা চাইলে কিন্তু নিজেদের ইচ্ছে অনুযায়ী ব্যবহার করতে পারেন।। চাল এরপর আপনাদের হালকা হাতে ধুয়ে নিতে হবে খুব বেশি চাপ দিলে কিন্তু ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। এখন পর্যন্ত না চাল ধোয়া জল একেবারে স্বচ্ছ হয়ে উঠছে ততক্ষণ এটিকে ধুয়ে নিতে থাকুন। আপনাদের প্রায় 45 মিনিট থেকে 1 ঘন্টা সময় পর্যন্ত চাল ভিজিয়ে রেখে দিতে হবে। এর পরবর্তী ধাপে দাদা বৌদি বিরিয়ানির জন্য যেভাবে গরম মসলা তৈরি করা হয় ঠিক তেমনভাবেই গরম মশলা তৈরি সম্পর্কে জেনে নেব।।




২) এই গরম মসলা বানানোর জন্য আমাদের লাগছে দারচিনি,জায়ফল, শাহী জিরা, লবঙ্গ,এলাচ,জৈত্রী ও এক চা চামচ পরিমাণ কালো মরিচ। মসলার এই উপকরণ গুলিকে একত্র করে রাখার পর আমরা একটি মিশ্রণ তৈরি করে নেব। যেটি তৈরি করতে গেলে আমাদের প্রয়োজন হবে কিছুটা পরিমাণ মোষের দুধ আর খোয়া ক্ষীর। এর মধ্যে আপনারা খুব সামান্য এলাচ গুঁড়ো ব্যবহার করতে পারেন।হ্যান্ড ব্লেন্ডারের সাহায্যে আপনাদের এটি ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। তারপর আদা রসুন মিক্সিতে ভালো পেস্ট করে কাপড়ের সাহায্যে ছেঁকে নিয়ে আপনাদের আদা রসুনের একটি জল বানিয়ে নিতে হবে।।
৩) এবার একটিতে সাদা তেল নিয়ে তা গরম করে মোটামুটি ছোট টুকরো করে কাটা পেঁয়াজ আর কয়েকটি তেজ পাতা দিয়ে দিতে হবে। যখন দেখবেন ভাজতে ভাজতে পেঁয়াজ লালচে বা সোনালী হয়ে উঠেছে , তখনই এর মধ্যে আপনাদের জল দিয়ে দিতে হবে। জল ফুটে উঠলে তাতে রং আনার জন্য আপনাদের দিয়ে দিতে হবে কাশ্মীর চিলি পাউডার এবং হলুদ। কাশ্মীরি চিলি পাউডার কিন্তু এখানে আপনাদের একটু বেশি পরিমাণে ব্যবহার করতে হবে। জলের কালার লালচে হয়ে আসলে তখন তার মধ্যে গোটা বিরিয়ানির আলু গুলিকে দিয়ে দিতে হবে।




৩) আলু গুলি জলে দেওয়ার পর সেটাকে ভালো করে বয়েল করার জন্য আপনাদের ছেড়ে দিতে হবে। মোটামুটি ১২ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যেই আপনাদের আলু সেদ্ধ হয়ে যাবে। আলু গুলি পুরোপুরি সেদ্ধ করার দরকার নেই মোটামুটি ৭০ শতাংশ সেদ্ধ করলেই চলবে পরবর্তীতে বাকিটা আপনিই হয়ে যাবে। আলু সেদ্ধ করার সময় অবশ্যই স্বাদ মতন লবন দিতে ভুলবেন না।
এবার সেদ্ধ হয়ে গেলে আপনাদের আলু গুলিকে তুলে নিতে হবে এবং তার জায়গায় দিয়ে দিতে হবে পরিমাণ মতন খাসির মাংস।। দাদা বৌদি বিরিয়ানিতে কিন্তু বেশ বড় সাইজের মাটন ব্যবহার করা হয়, আপনারাও সেটাই করার চেষ্টা করবেন।। এবার আগে থেকে যে আদা রসুনের জল আমরা বানিয়ে রেখেছিলাম সেটা ঢেলে দিয়ে আমাদের মাটন গুলি সেদ্ধ করে নিতে হবে।




৪) মাটন গুলি সেদ্ধ করার সময় আমাদের দিয়ে দিতে হবে গরম মসলা যেটা আগে থেকে তৈরি করে রাখা হয়েছিল। মাটন যখন হাফ বয়েল হয়ে যাবে তখন দিয়ে দিতে হবে টক দই আর পরিমাণ মতো কাঁচা লঙ্কা বাটা। মোটামুটি ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ মাটন সেদ্ধ হয়ে গেলেই এর মধ্যে দুধ আর খোয়া ক্ষীরের মিশ্রণটা ঢেলে দিতে হবে। যদি আপনি প্রেসার কুকারে রান্না করে থাকেন সেক্ষেত্রে অবশ্যই মাটন গুলিকে বের করে তারপর এই মিশ্রণ মেশাবেন। এরপর আরো ১৫ থেকে ২০ মিনিট মাংস সেদ্ধ করে নেওয়ার পরে মাংস গুলিকে মিশ্রণ থেকে তুলে নিতে হবে।
৫) মাটন সেদ্ধ হয়ে যাওয়ার পরে ওই শুধু গ্রেভিটিকে আপনাদের আরো কিছুক্ষণ সময় সুন্দর রং আনার জন্য ফুটিয়ে নিতে হবে। মাংসের গ্রেভি আলাদা করে রাখার পরে আমাদের বিরিয়ানির জন্য জল বসিয়ে দিতে হবে। আপনারা এই সময় হাড়ির ঢাকনার উপরে লবণ, দারচিনি, গোলমরিচ, এলাচ এই উপাদানগুলি রেখে দিতে পারেন তাহলে জলের সাথে কিন্তু এগুলো গরম হয়ে যাবে। জল গরম হয়ে গেলে তাতে মসলাগুলি ঢেলে দিন। তারপর দিয়ে দিন প্রায় ঘন্টাখানেক সময় ধরে ভিজিয়ে রাখা সেই বাসমতি চাল।




খুবই হালকা হাতে এটাকে মিশিয়ে নিতে হবে আপনাদের। যতক্ষণ বিরিয়ানির চাল সেদ্ধ হচ্ছে ততক্ষণ মাটন গুলিকে একটি আলাদা পাত্রে আপনাদের সাজিয়ে নিতে হবে। চেষ্টা করবেন বিরিয়ানিতে দম দেওয়ার জন্য নিচের অংশটা মোটা এরকম একটা পাত্র থাকলে খুবই ভালো হয়।। মটন আর আলু সাজিয়ে নেবার পরে যে গ্রেভি আপনারা আলাদা করে রেখেছিলেন সেটাকে এর মধ্যে ঢেলে দিন।। এবার আগে থেকে যে গরম মসলা আপনারা বানিয়ে রেখেছিলেন সেটাকে এর মধ্যে ভালো করে ছড়িয়ে দিন। আর সবশেষে দিয়ে দিন কিছুটা পরিমাণে খোয়া ক্ষীর।




এবার মাটন সাজিয়ে নেওয়ার পরে পাত্রটাকে ভেঁপে নেওয়ার জন্য একটা পাত্রের উপর বসিয়ে রেখে দিতে হবে। তারপর সবশেষে বাসমতি চাল সেদ্ধ হয়ে যাওয়ার পরে এর উপরে দিয়ে দিতে হবে। তবে একবারে পুরো চাল কিন্তু দেবেন না। প্রথমে কিছুটা চাল দেওয়া হয়ে গেলে সেটাকে হাড়ির মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। তারপর উপর থেকে ছড়িয়ে দিতে হবে গোলাপজল, কেওড়া জল রিঠা জলের একটি মিশ্রণ। দম দেওয়ার জন্য আপনাদের সিলভার ফয়েলপেপার ব্যবহার করতে হবে।
এবার প্রথম ১০ মিনিট হাই ফ্লেমে এবং পরবর্তী ৩০ মিনিট লো ফ্লেমে এবং বন্ধ করে রাখার পর ২৫ মিনিট আপনাদের দম দিয়ে নিতে হবে। সবশেষে আপনারা সিলভার ফয়েল পেপার খুলে নিয়ে গরম গরম এই বিরিয়ানি কিন্তু পরিবেশন করতে পারেন । বাড়িতে তৈরি এই অসাধারণ স্বাদের দাদা বৌদি বিরিয়ানি আপনাদের কেমন লাগলো সেটা কিন্তু অবশ্যই আমাদের জানাতে ভুলবেন না।











