কেমন আছেন ৮৪ বছর বয়সী বর্ষিয়ান অভিনেতা মনোজ মিত্র? কিভাবে কাটছে অভিনেতার দিন?

নিজস্ব প্রতিবেদন: অভিনেতা মনোজ মিত্র একজন প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার এবং নাট্য অভিনেতা ছাড়াও , তিনি একজন অধ্যাপক, নাটক রচয়িতা এবং নির্দেশক। সাজানো বাগান নাটকটি হলো তার অমর সৃষ্টি।বিখ্যাত নাট্যদল সুন্দরম তার হাতেই গড়ে উঠেছিল। এছাড়াও তিনি দর্শকদের উপহার দিয়েছেন একের পর এক বাংলা ছবি। আজকের এই বিশেষ প্রতিবেদনে আমরা মনোজ মিত্র মহাশয় এর জীবনের কিছু অজানা কথা আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চলেছি। তাই প্রতিবেদনটি শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইল।

১৯৩৮ সালের ২২শে ডিসেম্বর অধুনা বাংলাদেশে তার জন্ম। ডাক নাম ছিল বুদ্ধদেব। তার বাবা অশোক কুমার মিত্র ছিলেন একজন শিক্ষক এবং মা রাধারানী মিত্র গৃহবধূ।মনোজ মিত্র ছিলেন তার বাবা-মায়ের পাঁচ সন্তানের মধ্যে প্রথম সন্তান। তার অন্য এক ছোট বোন আর ছোট ভাই খুব অল্প বয়সেই মারা গিয়েছিলেন। গ্রামের বিভিন্ন পালা পার্বণে হওয়া নাটক দেখে তার অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ জন্মায়। এরপর তিনি স্কুল-কলেজের নাটকের পাশাপাশি গল্প লেখাও শুরু করেছিলেন। তখনকার নামকরা পত্রিকা মাসিক বসুমতি ও মন্দিরাতে তিনি নিয়মিত গল্প লিখতেন।।

১৯৫৭ সালে মনোজবাবু তার কয়েকজন বন্ধুকে নিয়ে সুন্দরম নামে একটি নাট্য দল গঠন করেছিলেন। তিনি পথের পাঁচালী এবং সিঁড়ি নাটকে অভিনয় করেছিলেন সেখানে। এই সুন্দরমের জন্যই তিনি জীবনের প্রথম নাটক মৃত্যুর চোখে জল রচনা করেছিলেন। বেশ কিছু বছর পরে তিনি সুন্দরম ছেড়ে গন্ধর্ব নামের একটি নাট্য দলের অভিনয় করেছিলেন।

১৯৬১ সালে রানীগঞ্জের ত্রিবেণী দেবী ভালোটিয়া কলেজে বেশ কিছুদিন অধ্যাপনার কাজ করেছিলেন মনোজ বাবু। তারপর করেছিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার কাজ। তবে পরবর্তীতে অধ্যাপনা আর গবেষণার কাজ ছেড়ে দিয়ে রিতায়ন নামে আরও একটি নাট্যদল গঠন করেন তিনি। এখানে তার নিজের লেখা নাটকে অভিনয় করা হতো।

এমনকি পরিচালনার দায়িত্ব তিনি নিজের কাধেই তুলে নিয়েছিলেন। যদিও ১৯৭০ সালে এই দলটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১৯৭৫ সালে আবারো মনোজ মিত্রের নেতৃত্বে সুন্দরম নাট্যদলটি চালু করা হয়। এর যাবতীয় দায়িত্ব তিনি নিজেই গ্রহণ করেছিলেন। ১৯৭৭ সালে তার কালজয়ী নাটক সাজানো বাগান রংমহলে প্রথম অভিনীত হয়। নাটকটির মঞ্চায়ন তার পছন্দ না হওয়ায়, তিনি আবারো নতুন করে নাটকটি লিখেছিলেন।

মুক্তাঙ্গনে নাটকটি দ্বিতীয়বার অনুষ্ঠিত হয়। এই নাটকটি তখন দর্শকমহলে ব্যাপক আলোড়ন ফেলেছিল। ১৯৮০ সালে তপন সিনহা এই নাটকটির আদলেই তৈরি করেছিলেন বাঞ্ছারামের বাগান ছবিটি। এই ছবিতে মনোজ মিত্র নিজেই বাঞ্ছারামের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। এটি ছিল তার অভিনীত প্রথম ছবি। ছবিটি রাতারাতি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। বাংলা চলচ্চিত্রে বাঞ্ছারামের বাগান ছবিটি একটি মাইলফলক হয়ে রয়েছে। এরপর মনোজ মিত্র বহু বাংলা ছবিতেই অভিনয় করেছেন।

ঘরে বাইরে থেকে শুরু করে রাখি পূর্ণিমা,মধু মালতি, ময়নাতদন্ত ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।সত্যজিত রায় থেকে শুরু করে তরুণ মজুমদার গৌতম ঘোষ সহ বহু পরিচালকের সাথেই কাজ করেছেন মনোজ বাবু। দূরদর্শনের অনেক ধারাবাহিকেও দেখা গিয়েছে তাকে। ব্যক্তিগত জীবনে আরতী মিত্র কে বিয়ে করেছিলেন মনোজ বাবু। তাদের একটি মেয়ে রয়েছে যার নাম ময়ূরী মিত্র। যদিও বর্তমানে ৮৪ বছর বয়সে মনোজ মিত্রের শারীরিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। অবসরেই তিনি দিন কাটাচ্ছেন কলকাতার বাড়িতে।

বার্ধক্য জনিত বিভিন্ন সমস্যার কারণে কিছু বছর আগেই নাট্য একাডেমীর বিভিন্ন পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন তিনি।। এখন ঘরে শুয়ে বসে থেকে কিছু অল্প সল্প লেখালেখির মাধ্যমেই জীবন কাটছে তার। তবে মাঝেমধ্যে দু একটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে দেখা গিয়েছে মনোজ মিত্র মহাশয়কে।এই প্রতিবেদন দ্বারা আমরা জানাই তার প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা।

Leave a Comment