







নিজস্ব প্রতিবেদন: মহানায়ক উত্তম কুমারের অকাল প্রয়াণের পর বাংলা ছবির জগত যখন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল তখন, মুষ্টিমেয় যে কয়েকজন অভিনেতার প্রতি নির্ভর করে ইন্ডাস্ট্রি এগিয়ে যাওয়ার আশা দেখেছিল রঞ্জিত মল্লিক ছিলেন তাদের মধ্যে অগ্রগণ্য। নায়ক থেকে চরিত্রাভিনেতা সবেতেই তিনি ছিলেন সফল। আজ পর্যন্ত তিনি দর্শকদের উপহার দিয়েছেন বহু জনপ্রিয় ছবি। আজকের এই বিশেষ প্রতিবেদনের মাধ্যমে তার জীবনের কিছু অজানা কথা আমরা জানাবো। পাঠক বন্ধুদের কাছে তাই প্রতিবেদনটির শেষ পর্যন্ত পড়ার অনুরোধ রইল।
২৮ সেপ্টেম্বর ১৯৪৪ সালে কলকাতার ভবানীপুরের বনেদি মল্লিক পরিবারে তার জন্ম হয়। ছোট থেকেই তার অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ ছিল। তার বাবা উপেন্দ্র চন্দ্র মল্লিক ছিলেন ল-ইয়ার। গ্র্যাজুয়েশনের পর ল নিয়েই পড়েছিলেন তিনি। তবে ওকালতির থেকে তার কাব্য চর্চায় মনোযোগ ছিল বেশি। পেশাগতভাবে বাড়ির সকল সদস্যরা অন্যান্য বিভিন্ন জায়গায় যুক্ত থাকলেও গান-বাজনা এবং আবৃত্তির চর্চা ছিল। আইন পড়ার পরে কিছুদিন চাকরি করেছিলেন রঞ্জিত মল্লিক। তার কাকার বন্ধু ছিলেন পরিচালক মৃণাল সেন। সেই সুবাদে ১৯৭৪ সালে তারই পরিচালিত ছবি ইন্টারভিউ তে অভিনয় করে ইন্ডাস্ট্রিতে পদার্পণ করেন রঞ্জিতবাবু।




এরপর কলকাতা একাত্তর, পরিবর্তন, দেবী চৌধুরানী, মৌচাক, স্বয়ংসিদ্ধা সহ একাধিক ছবিতে কাজ করে গিয়েছেন তিনি। দেবী চৌধুরানী তে তিনি মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন। এর আগেও চতুরঙ্গ সিনেমাতেও তারা একসঙ্গে কাজ করেছিলেন। একটা সময় উত্তম কুমার আর সুচিত্রা সেনের সিনেমা দেখতে গিয়ে ১০ আনার টিকিটের জন্য লাইনের ঠেলাঠেলি পর্যন্ত করেছেন তিনি।
আর সেই সুচিত্রা সেনের সাথেই অভিনয় এটা যেন রঞ্জিত মল্লিকের কাছে একেবারেই অকল্পনীয় ছিল। স্বয়ংসিদ্ধা ছবিতে হাবাগোবা ছেলের চরিত্রে রঞ্জিত মল্লিকের অভিনয় দর্শকদের মনে গেঁথে রয়েছে। মহানায়ক উত্তম কুমার মারা যাওয়ার পর বাংলা ছবির দর্শকদের মনে একপ্রকার হতাশা তৈরি হয়েছিল। তারা আর বাংলা ছবি দেখতে যেতে চাইতেন না। প্রযোজোকরাও ছবি তৈরির জন্য সেই সময় টাকা ঢালতে ভয় পেতে লাগলেন। তখন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ঘুরে দাঁড়িয়েছিল রঞ্জিত মল্লিকের শত্রু ছবির হাত ধরে। এই ছবির পরিচালক ছিলেন অঞ্জন চৌধুরী।




শত্রুর পর বর্তমান সময় পর্যন্ত প্রায় ১৫০ টিরও বেশি ছবিতে কাজ করেছেন রঞ্জিত মল্লিক। তার অভিনীত সিনেমার তালিকা কিন্তু ভীষণ লম্বা এবং বহু প্রতিভাবান অভিনেত্রীদের সাথেই জুটি বেঁধেছিলেন তিনি। সেই তালিকায় যেমন মিঠু মুখার্জি, মুনমুন সেন প্রভৃতি নায়িকারা রয়েছেন তেমনভাবেই ওয়াহিদা রহমান,মালা সিনহা, শর্মিলা ঠাকুর, মৌসুমী চট্টোপাধ্যায় এর মতন অভিনেত্রী রাও রয়েছেন।
রঞ্জিত মল্লিক রোমান্টিক এবং অ্যাকশন হিরো দুই ক্ষেত্রেই কিন্তু ব্যাপকভাবে সফলতা পেয়েছিলেন। নায়ক হিসেবে তিনি যেমন মানুষের মধ্যে জনপ্রিয় ছিলেন ঠিক তেমনভাবেই ছিলেন একজন চরিত্রাভিনেতা হিসেবে। রঞ্জিতবাবু এমন একজন অজাতশত্রু ব্যক্তি যাকে কখনো ইন্দাস্ট্রিতে কোন বিতর্কের অংশ হতে দেখা যায়নি। সম্ভবত এই কারণেই সাধারণ মানুষের কাছে আজও তিনি ভীষণভাবে সমাদৃত। জীবনেও অত্যন্ত সফল মানুষ রঞ্জিত মল্লিক।নিজের আদর্শেই তিনি মানুষ করেছেন একমাত্র মেয়ে কোয়েল মল্লিককে।











